ওডেস্কে
বাঙালীদের হুজুগে কর্মকাণ্ড এবং আমাদের ভূমিকা
বাংলা ব্লগ
ফোরামসহ ফেইসবুকেও বাঙালীদের ওডেস্কে বিব্রতকর কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখালেখিটাকে আপনি
কিভাবে দেখছেন? এটা ঠিক সবাই হুজুগে ওডেস্কে
রেজিস্ট্রেশন করছে এবং বিড করার বদলে উল্টো নিজের জীবনবৃন্তান্ত দিয়ে জব পোস্ট্
করে বসে থাকছে।
এটা থামানোর
জন্যই মূলত বিভিন্ন ব্লগ ফোরামে হুজুগে ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন না করার জন্য ব্লগ
লেখার একটা হুজুগ তৈরী হয়েছে। সবাই যারযার ব্লগে দু'চার কলম লিখছেন
আর যারা অত কষ্ট করতে রাজী নন তারা আরেকজনের লেখা কপি করেই নিজের ব্লগে পোস্ট করে
দিচ্ছে।
এটা কি খারাপ?
লেখার উদ্দেশ্য
অবশ্যই ভাল এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কিন্তু আমি ভাবছি এটা কতখানি ফলপ্রসু হবে? গত ছয়মাস আগেও আমার এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন ওডেস্কসহ বিভিন্ন
মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানতো। কিন্তু গত কয়েকদিনে হঠাত করে ওডেস্কের নাম জানা
লোকের সংখ্যা সেইসাথে একাউন্টের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
কিন্তু এই ওডেস্কের নাম ঠিকানাটা এভাবে প্রচার হচ্ছে কোথা থেকে?
সবাই একই কথা
বলছেন, পিটিসি সাইটগুলো পালাচ্ছে, ফলে সবাই ওডেস্কের দিকে ঝুকছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পিটিসি সাইটগুলোর প্রচার হতো এমএলএম ব্যবস্থার কারণে। কিন্তু এত
মার্কেটপ্লেস থাকতে ওডেস্কের প্রচার এভাবে হচ্ছে কিভাবে যে সবাই শুধু ওডেস্কেই
রেজিস্ট্রেশন করছে?
আমার নিজের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা
মোবাইল ফোন
বরাবরই একটা বিরক্তিকর জিনিস আমার কাছে এবং মোবাইলৈ যোগাযোগর ক্ষেত্রে আমি যথেষ্ট
অসামাজিক এটা বলতে দ্বিধা নেই। ইদানিং এত বেশী ফোন আসছে যে বিরক্তির চূড়ান্ত
মাত্রায় পৌছে যেতে হয়। বেশীরভাগ ফোনগুলোই আসে পরিচিত মানুষগুলোর কাছ থেকে এবং
তারমধ্যে বেশীরভাগ ওডেস্ক সংক্রান্ত। প্রশ্নের ধরণ এরকম-
"অমুক আমাকে একটা একাউন্ট করে
দিয়েছে এখন কী করবো?"
"একাউন্ট করেছি এখন কয়েকটা
পরীক্ষার উত্তরগুলো পাবো কোথায়।"
"ওডেস্কের কিছু বুঝতেছি না একটু
হেল্প লাগবে"
"ওডেস্কে এ্যাড দিবো কিভাবে"
:O
প্রশ্নগুলো
থেকেই খুব পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায় আসলে ওডেস্ক সম্পর্কে তাদের ধারণা কতখানি।
আপনি যদি খুব বিনয়ের সাথে তাদেরকে উল্টো জিজ্ঞাসা করেন, ভাই ওডেস্ক কী জিনিস? বা এটা
সম্পর্কে কোথা থেকে জেনেছেন?
এ প্রশ্নটার
জবাটাই সবচে গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখবেন এরা ওডেস্ক সম্পর্কে ওই
হুজুগ বিরোধী পোস্টগুলো থেকেই জেনেছেন। যেহেতু হুজুগ বিরোধী পোস্টগুলোতে আপনি
নিজেই নিশ্চিত করেছেন ওডেস্কে আসলেই সৎ ভাবে আয় করা যায় এবং সবচে বড় ব্যাপার
রেজিস্ট্রেশন করতে কোন টাকাপয়সা লাগে না, অনেকে বলছেন দু'এক মাসের মধ্যেই কাজ শিখে ওডেস্কে আয় করা সম্ভব তাহলে রেজিস্ট্রেশন
করতে অসুবিধা কোথায়?
আপনি নিষেধ
করেছেন কাজ না জেনে ওডেস্কের দিকে না যেতে কেননা দেশের সব ফ্রিল্যান্সারের জন্যই
খারাপ সব ঠিক আছে। কিন্তু অত বড় পরিসরে চিন্তা করার মত শক্তি অনেকেরই থাকে না যা
আপনার মধ্যে আছে।
সবাই সাধারণত
নিজের অবস্থান থেকেই চারপাশ দেখে। কারো উচ্চতা যদি চার ফিট এবং কারো উচ্চতা যদি ৬
ফিট হয় উভয়ে সমান দেখবে না এটাই স্বাভাবিক। এখানে উচ্চতা দিয়ে আমি আসলে
চিন্তুশক্তিটাকে বুঝিয়েছি।
দীর্ঘদিন
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করে আপনি সবকিছুকেই যেখাবে তুলনা করতে পারেন সবেমাত্র
এসএসসি পাশ করা একটা ছেলে যে কিনা বাড়ি আর স্কুল ছাড়া কোথাও কোনদিন যায়নি আর ক্লাসের
বইয়ের বাইরে হাতেগোনা দু'চারটা প্রেমের উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ
তার জন্য ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন করলে দেশের বদনাম কথাটাকে বিশ্বাস করানো কঠিন এবং
উল্টো আপনি কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পোস্টটা লিখেছেন ধরে নিয়ে আপনার উপদেশগুলো
এড়িয়ে আপনার কাছ থেকেই টাকার নিশ্চয়তা পাওয়া ওডেস্কে একটা একাউন্ট করে ব্যাপারটা
নিজে যাচাই করে দেখার আগ্রহ জন্মানোটাই স্বাভাবিক।
তাহলে কি এসবের কোন প্রতিবাদই করবো না?
প্রতিবাদ
অবশ্যই করতে হবে কিন্তু প্রতিবাদের পদ্ধতি বদলানো প্রয়োজন। ব্লগ ফোরামে ঢাকঢোল
পিটিয়ে ইদুর তাড়ানোর চেষ্টা করে কোন লাভ হবে বলে মনে করি না। কাজের মধ্যে এতটুকুই
হবে, অনেকেই জানতে পারবে আপনি ওডেস্কে
কাজ করেন, ওডেস্ক সম্পর্কে আপনার ভাল ধারণা
আছে, কিছু শুভাকাঙ্খী জুটবে। পাশাপাশি
নতুন কিছু মানুষের নতুন করে আগ্রহ জন্মাবে একটু ওডেস্ক ঘেটে দেখার।
তাহলে প্রতিবাদটা করবো কিভাবে?
§ ওডেস্কে জব পোস্টের জায়গায়
কভারলেটার টাইপ পোস্টগুলো দেখলে ফ্ল্যাগ করতে পারেন। প্রতিটি জবপোস্টের উপরের
ডানদিকে ফ্ল্যাগ করার ব্যবস্থা আছে। ওডেস্ক কোয়ালিটি টিম দ্রুত পোস্টগুলো সরিয়ে
দেবে।
§ আউটসোর্সিং সংক্রান্ত লেখাগুলো
কোথাও প্রকাশ করার আগে ভেবে নিন আপনার লেখাটির পাঠক কারা? তাদের মানসিকতা,
তাদের অবস্থা এবং অবস্থানের কথা
ভেবে লেখাটা সেভাবে তৈরী করুন। ওই অবস্থানে থাকে অবস্থায় পাঠকদের মনে কোন
প্রশ্নগুলো আসতে পারে সেটা যতটা সম্ভব ব্যাখা করার চেষ্টা করুন।
§ গুগলে ওডেস্ক লিখে সার্চ দিলে
অসংখ্য টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় কিভাবে ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন করা যায় এসব নিয়ে। সেদিন
মাসুম রানা জানালেন ওটা নাকি বিটিভিতেও দেখাচ্ছে যদিও আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
এসব থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং যারা করছে তারাও আপনার আমার পরিচিত, তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন যে সময়টাতে ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন করার
টিউটোরিয়াল লিখছে সে সময়টাতে ওডেস্ক কী, কেন, কিভাবে, এখানে কাজ করতে হলে কী যোগ্যতা
থাকা প্রয়োজন, ওখানে কী কী কাজ করা যায়, কী কী না জানলে কাজ করা যায় না এসব নিয়ে লিখতে।
§ ওডেস্কে কী করা উচিত সেটা লেখার
আগে কী করা উচিত নয় সেগুলো উল্লেখ করুন এবং কেন উচিত নয় সেগুলো ব্যাখ্যা করুন।
§
§ পরিক্ষার প্রশ্নোত্তর ফাঁসকে
নিকৃষ্টতম কাজের তালিকায় ফেলা যেতে পারে। কেউ আপনার কাছে পরিক্ষার প্রশ্ন বা উত্তর
চাইলে তাকে ওগুলো না দিয়ে তাকে সংশ্লিষ্ট কাজটি ভালভাবে সেখার পরামর্শ দিন। অবশ্যই
বকা দিয়ে নয়। বুঝিয়ে বলুন কেন পরিক্ষায় নকল করা উচিত নয়। সে আপনার যত আপনই হোক না
কেন।
§ কভার লেটারের স্যাম্পল প্রকাশ
থেকে বিরত থাকুন। কভার লেটার কিভাবে লিখতে হয় সেটা শিখিয়ে দিন তাই বলে কভার লেটারে
কী লিখবে সেটা নয়। পদ্ধতিটা জেনে যারযার কভার লেটার নিজে লিখবে এটাই কাম্য।
কপিপেস্ট কভার লেটারটাও পরিক্ষায় নকল করার মতই অপরাধ।
§ ইতিমধ্যেই যারা কোন কিছু না জেনেই, ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন করেছে এবং আন্দাজে লাফালাফি করছে আমি মনে করি
না এদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু আছে। কেননা অনেক এক্সপার্ট, দারুন প্র্রোফাইল,
পোর্টফোলিও, কভারলেটার সবকিছু থাকার পরও মাসের পর মাস কাজ পাচ্ছে না সেখানে কোন
কিছু না জেনে ছাগলামি করতে গেলেই যে হায়ার হয়ে যাবে ব্যাপারটা অত সোজা না। দু'চারটা যাও হবে ওগুলো বেশীদিন টিকবে না। কয়দিন লাফালাফি করবে তারপর ধুর! সব ভুয়া বলে ঠিকই নিজের রাস্তা
ধরবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন ।