গতপর্বে আমরা
দেখেছি পিপিএইচের প্রাথমিক বর্ননা, বৈশিষ্ঠসমূহ
এবং অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সাথে পিপিএইচের তুলনা। আমাদের এই সংখ্যার
আলোচনার প্রধান বিষয়গুলির মধ্যে থাকছে,
ক. পিপিএইচ
সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান।
খ. পিপিএইচে যে
সমস্ত কাজ পাবেন।
গ. পিপিএইচে
যারা কাজ করতে পারবেন।
পিপিএইচে যে সমস্ত কাজ পাবেন
বাংলাদেশের
পরিপ্রেক্ষিতে, পিপিএইচে পাবেন হরেক পদের কাজ, প্রোগ্রামিং থেকে শুরুকরে ভিডিও এডিটিং কিছুই বাদ নেই যা পিপিএইচের
জব লিস্টে প্রতিদিন পোস্ট হয় না। আসুন দেখে নি পিপিএইচে সহজেই পাওয়া যায় এমন কিছু
আলোচিত কাজের তালিকা।
১. লোগো: লোগো
ডিজাইনিং গ্রাফিক্স ডিজাইনের ফলিত একটি শাখা, প্রচুর লোগো
ডিজাইনের কাজ পিপিএইচে প্রতিনিয়ত পোস্ট হয়, বেশিরভাগ ইউকে
এবং ইউএস ভিত্তিক বায়ারেরা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো তৈরির কাজ
ফ্রীল্যান্সারদের দিয়ে থাকেন। ভালো ও বিশ্বমানের লোগো তৈরি করতে বায়ারেরা বেশ ভালো
পরিমান অর্থ বরাদ্দ রাখে ফলে এই বিষয়ে দক্ষ ফ্রীল্যান্সারেরা অধিক পরিমান লাভ করতে
পারে লোগো ডিজাইনিং এর মাধ্যমে।
২. ওয়েব
ডিজাইন: প্রতিনিয়ত শত-সহস্র নতুন ওয়েবসাইট উন্মুক্ত হচ্ছে, এর ফলে ওয়েবের ইন্টারফেস ডিজাইনের চাহিদা বাড়ছে ব্যাপক হারে, পিপিএইচও এই সুযোগে বসে নেই চুপটি করে, ফ্রীল্যান্সারদের অফার করছে প্রচুর বায়ারের দেয়া ওয়েব ডিজাইনিং এর
কাজ, লোগোর পরেই ওয়েব ডিজাইনিং এর
জনপ্রিয়তা পিপিএইচে সর্বাধিক।
৩. কপিরাইটিং:
কন্টেন্ট রাইটিং, আর্টিকেল রাইটিং বা সম্মিলিতভাবে
গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে নতুন কোনো প্রডাক্ট, ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মতামত শব্দের কারুকাজে লেখার
দক্ষতাকেই কপিরাইটিং বলা যেতে পারে, এমন কাজের ভালো
বাজার আছে পিপিএইচে, অনেক ক্লায়েন্টই লেখালেখি ভিত্তিক
কাজ উপযুক্ত দরে কিনে নিতে আগ্রহী হয়।
৪. অ্যাকাউন্ট
সাপোর্ট: অনলাইনে বানিজ্য এখন অনেকটাই রোজকার কাজে পরিনত হয়েছে, অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মতো, ভার্চুয়াল
কল-সেন্টার গোত্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল অ্যাকাউনটেন্ট নিয়োগের কাজের
চাহিদা পিপিএইচেও আছে।
৫. ওয়ার্ডপ্রেস
থিম: জনপ্রিয় ও ব্যাপুল ব্যাবহৃত ব্লগ-ওয়েবসাইট লেখার খ্যাতনামা টুল ওয়ার্ডপ্রেসের
থিম বানানোর কাজের চল আছে পিপিএইচেও, শুধুমাত্র থিম
ডেভেলপমেন্টের কাজ করিয়ে বড় আকারের পয়সা দিচ্ছে বায়ার ফ্রীল্যান্সারদের অহরহ।
৬.
প্রোগ্রামিং: জাভা, পিএইচপি, পার্ল, সি++ থেকে শুরু করে যতগুলো
জনপ্রিয় কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে, সবকটার কদর আছে
এই মার্কেটপ্লেসে, তাই প্রোগ্রামার ভাইয়েরা সহজেই
তাদের স্কিল বিক্রয় করতে পারবেন যেকোনো নামি দামি ক্লায়েন্টের ভিডিওগেম বা
সফটোয়্যার ফার্মের কাছে, আর দামের দিক থেকে কার্পন্যের
স্বীকার হবেন না মোটেই।
৭. ডেটা
এন্ট্রি: অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে পিপিএইচে ডেটা এন্ট্রির বাজার ক্ষুদ্র হলেও
রয়েছে, তবে খুব সাধারনত এমন ধরনের কাজ
উপরে উল্লেখিত কাজের মতো সচরাচর মেলে না।
৮. অন্যান্য:
এসব ছাড়া রয়েছে, লিগ্যাল সার্ভিসের কাজ, ভয়েজ ওভার রেকর্ডিং বা ধারা ভাষ্য রেকর্ডিং এর কাজ, লিড জেনেরেশান বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশানের কাজ, ভিডিও এডিটিং,
ট্রান্সলেশানসহ বিবিধ প্রকারের আরো
অনেক কাজ।
উল্লেখিত কাজ
ছাড়াও অনেক খুঁটিনাটি কাজের সুযোগ আছে পিপিএইচে, মজার বিষয়
হচ্ছে খুব ব্যতিক্রমধর্মী অনেক কাজের আওয়ার্লি মিলবে পিপিএইচে, যেমন, মুজো দিয়ে বানরের পুতুল বানানোর
ভিডিও টিউটোরিয়াল সহ লাইভ শিখানোর আওয়ার্লি, ভিয়েতনামের
স্বাদু ওন্থন বানানোর রেসিপি লাইভ ট্রেনিং অথবা ঘরে বসে বেলি ডান্সিং শেখানোর
টিউটোরিয়ালের আওয়ার্লিও রয়েছে এই বৈচিত্রময় অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। উল্লেখ্য, পিপিএইচে ‘আওয়ার্লি’ কি, এবং এর ব্যাবহার নিয়ে পুরো একটি
খন্ড পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে।
পিপিএইচে যারা কাজ করতে পারবেন
যোগ্যতার
বিচারে শুধুমাত্র দক্ষ ফ্রীল্যান্সারেরাই পিপিএইচে তাদের সার্ভিস সেল করতে পারবে, এর জন্য দরকার প্রাথমিক থেকে উচ্চতর কিছু প্রশিক্ষনের, মনে রাখতে হবে যারা পিপিএইচে কাজ করতে আগ্রহী, কম্পিউটার পরিচালনার দক্ষতার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষার উপরে ভালো দক্ষ
হতে হবে, বায়ারের সাথে সুনিপুন যোগাযোগের
পারদর্শিকতা একজন ফ্রীল্যান্সারের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অত্যাবশ্যক। এর মানে এই নয়
যে পিপিএইচে কাজ পেতে চাইলে দক্ষতার মাত্রা অতিক্রম করতে হবে, নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে যারা কাজ করছেন
তাদের কাছে পিপিএইচ অনেক বেশি আকর্ষনীয় আর চমকপ্রদ ঠেকবে, আর যারা একেবারে নতুন পিপিএইচে আপনার পারদর্শিকতা বিক্রি করতে
আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে দক্ষতাকে যাচাই করে নিতে হবে, যেমন ধরুন আপনি
প্রোগ্রামিং এর কাজ করতে আগ্রহী হলে আপনার অন্তঃত তিন থেকে চারটি প্রোগ্রামিং এর
ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হবে,
এর পরে আপনার ইংরেজির উপর দক্ষতা
এবং সবশেষে কমিউনিকেশান যা কাভার লেটার লেখার জন্য প্রযোজ্য। একইভাবে গ্রাফিক্স
ডিজাইনার হলে আপনাকে এডোবি ফোটোশপ, ইল্যুসট্রেটর
এবং আনুসাঙ্গিক একাধিক ডিসিসি (ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েট) প্রোগ্রাম চালনায় পটু
হতে হবে। কাজের স্যাম্পল থাকাটা বেশ জরুরী তাই কিছু কাজ নিজে নিজে করে রাখতে পারেন, পরে বায়ারকে তার কিছু স্যাম্পল দেখালেই যথেষ্ট, আর এরপরেই দক্ষতা ইংরেজী ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পিপিএইচে
গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপরে তুলনামূলকভাবে অধিক কাজ পাওয়া সম্ভব, তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রফেশনে আগ্রহীরা দক্ষ হয়ে পিপিএইচে নিজেদের
কাজ বিক্রি করতে পারেন অনায়াসেই। তবে একইভাবে দক্ষ হয়ে অন্যান্য কাজের
ক্ষেত্রগুলোতেও সহজেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
পিপিএইচে কিছু
টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশান রয়েছে,
সংক্ষেপে এদের বলা হয় ‘টি অ্যান্ড সি’,
যেখানে উল্লেখ করা আছে ১৮ বছরের
নিচে কারো পিপিএইচে কাজ করা যাবে না, ব্যাংক
অ্যাকাউন্ট কিংবা পেপল অ্যাকাউন্ট অধিকারী হতে হবে, বায়ারদের সাথে
সহমর্মে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কিভাবে পিপিএইচে প্রোফাইল তৈরী করতে হবে
সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আরেকটি খন্ডে।
সারসংক্ষেপে
পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে বিষয়ভিত্তিক কাজে দক্ষতা অর্জনের পরে ইংরেজী ও
বায়ারদের সাথে একজন পিপিএইচের ফ্রীল্যান্সার কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে তার উপরেই
কাজ জয় করার মাপকাঠি পরিচালিত হবে, এর জন্য চাই
সদিচ্ছা, আগ্রহ ও পরিশ্রমের; বাকিটা পিপিএইচ খোদ পুষিয়ে দেবে, অনায়াসে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত প্রকাশ করুন ।